বৃহস্পতিবার । ৬ই নভেম্বর, ২০২৫ । ২১শে কার্তিক, ১৪৩২

মঞ্জু ও শ্রাবনের মনোনয়ন খুলনা-যশোরে বিএনপি’র রাজনীতিতে নতুন হাওয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বিএনপি গত ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ২০২১ সাল থেকে অনেকটা কোনঠাসা বিএনপির সাবেক বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, নগর শাখার সাবেক সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মোঃ নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে খুলনা-২ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য অপেক্ষাকৃত তরুন নেতা কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবনকে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে মনোননয়ন দেওয়া হয়েছে। এ দু’জনের মনোনয়নে খুলনা ও যশোর রাজনীতিতে বইছে নতুন হাওয়া।

দীর্ঘ ৪৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনে নজরুল ইসলাম মঞ্জু খুলনা বিএনপির রাজনীতিতে এক প্রভাবশালী নাম। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে নানান চড়াই-উত্তরাই পার হতে হয়েছে তাঁর। ১৯৭৯ সালে ছাত্রদল থেকে রাজনীতির হাতে খড়ি। ১৯৮৭ সালে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক, ১৯৯২ সাল থেকে টানা ১৭ বছর সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সভাপতি ছিলেন। ২০০৮ সালে তিনি খুলনায় একমাত্র বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

২০২১ সালে ডিসেম্বরে নগর বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষণায় তিনি না থাকায় রাজনীতিতে ছন্দ পতন ঘটে। গেল ৪ বছরে তার অনুসারীদের মহানগরের কোন ওয়ার্ড কমিটিতেও রাখা হয়নি। তবে হাল ছাড়েননি তিনি। সকল প্রকার দলীয় কর্মকান্ডে তার অনুসারীদের নিয়ে সরব ছিলেন। মাঠ পর্যায়ে তিনি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মন জয় করেছেন সাদামাটা জীবন যাপনের মধ্য দিয়ে। যে কারণে আসন্ন নির্বাচনে দল তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে। আর এর মধ্যদিয়ে খুলনার রাজনীতিতে এক নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে। যে কোন সময়ের তুলনায় সিংহভাগ নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন খুলনা বিএনপি আরও গতিশীল ও সুসংগঠিত হবে।

কেশবপুরের কপোতাক্ষ নদের তীরে শৈশবে বেড়ে ওঠা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শ্রাবণ। কেশবপুর কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ২০০৩-৪ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। ২০০৩ সালে ছাত্রদলে নাম লেখান। ২০২২ সালে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি হন তিনি। এর আগে ২০১৮ সালে মাত্র ৮ ভোটে হেরে যান। ২০২৩ সালে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। অবশ্য পরে কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য করা হয়।

মজার ঘটনা হচ্ছে, শ্রাবনের বাবা যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক, কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগৈর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেশবপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান। শুধু তাই না, তার বড় ভাই কাজী মুস্তাফিজুর ইসলাম মুক্তা আওয়ামী লীগের হয়ে নৌকা মার্কায় নির্বাচন করে সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেঝো ভাই কাজী মুজাহিদুল ইসলাম পান্না কেশবপুর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি, সেজো ভাই কাজী মাযহারুল ইসলাম সোনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক এবং তার ইমিডিয়েট বড় ভাই কাজী আযহারুল ইসলাম মানিক উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক। পুরো আওয়ামী পরিবারে শুধু তিনি বিএনপির আদর্শের মানুষ। আর যে কারণে তার বাবা তাকে ত্যাজ্য করেন। তবুও বাবা করোনায় আক্রান্ত হলে লুকিয়ে দেখতে যান। দীর্ঘ ১৭ বছর বাড়ি আসেননি। রাজধানীতে থেকে সকল প্রকার দলীয় কর্মকান্ডে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

দীর্ঘদিন পরে গত ২০ সেপ্টেম্বর কেশবপুর মাটিতে পা দেন শ্রাবণ। তার আগমনে প্রতিটা মোড়ে উৎসুক জনতার ঢল নামে। ফুল নিয়ে বরণ করে নেন সকলে। তারেক জিয়ার ৩১ দফা নিয়ে প্রচারে নামলে কেশবপুর থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ যোগ দেন মটর সাইকেল, মাইক্রো ও প্রাইভেট কার যায় তার সাথে। মুলত ওই দিনই অনেকটা প্রচার হয় শ্রাবনই হচ্ছেন ধানের শীষের কান্ডারী। সর্বশেষ ৩ নভেম্বর মনোনয়নের মধ্য দিয়ে যশোর রাজনীতিতে এখন নতুন হাওযা বইছে। জামায়াত প্রধান এ আসনে হঠাৎ পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

বর্তমানে শ্রাবণের বাবা ও ভাইয়েরা পলাতক। কিন্তু এলাকার হাজার হাজার নেতাকর্মী সব সময় তার সাথে রয়েছে। ইতোমধ্যে সিনিয়র নেতাদের বাসায় যেয়ে তাদের দোয়া ও পরামর্শ নিচ্ছেন। সব মিলিয়ে এক নতুন চমকের অপেক্ষায় কেশবপুরবাসী।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন